তাবলীগ
বিরোধী দু’টি বড়
অভিযোগের জবাব.....
হক বাতিলের সংঘাত মুখর এ পৃথিবীতে বাতিলের
সাথে অহর্নিষ সংগ্রাম করেই ইসলামকে সম্মুখে অগ্রসর হতে হয়েছে সর্বকালে। পরিণামে
আল্লাহ রাব্বুল
আলামীন হককেই বিজিত করেছেন যুগে যুগে। আর বাতিলকে করেছেন
নিশ্চিহ্ন
পরাভূত করে।
তাবলীগ জামাআতের ক্ষেত্রেও এর ব্যতিক্রম ঘটেনি। বর্তমান পৃথিবীতে এমন
কোন বাতিল ফিরক্বা নেই, যারা
আল্লাহর পধে আহবানকারী তাবলীগ জামাআতের উপর আক্রমণাত্মক হামলা করেনি। বিশেষ করে
লা-মাযহাবী তথা কথিত আহলে হাদীস সম্প্রদায়। তারাই তাবলীগ জামাআতের উপর সবচেয়ে
বেশি আক্রমণাত্মক হামলা করছে এবং তাবলীগ সম্পর্কে সবচেয়ে’ বেশি মিথ্যা অপবাদ রটিয়ে চলছে।
শুধু
বিরোধিতা করেই ক্ষান্ত হয়নি এ ইংরেজ সৃষ্ট দলটি। সাধারণ মুসলমানদের দ্বীন প্রচারী জামাআত থেকে
দূরে রাখতে বিভ্ন্নি প্রকার মিথ্যা ছল-চাতুরীর আশ্রয় নিচ্ছে ঘৃণ্য পদ্ধতিতে।
আল্লাহ তায়ালা সাধারণ মুসলমানদের এ বাতিল দলের প্রচারণায় বিভ্রান্ত না হওয়ার
জন্য সহীহ বুঝ দান করুন। ওদের অভিযোগ করা
দু’টি
অভিযোগের জবাব নিচে বিধৃত হল-
১/ তাবলীগ জামাআত ইসলাম ধর্মে কি নতুন
বিদআত ?
তাবলীগ জামাআত কোন নতুন দল বা সংগঠনের নাম
নয়, বরং নবী
করীম সাঃ এর তিরোধানের পূর্ব থেকেই বিদায় হজ্বের পর থেকে ব্যাপক হারে সাহাবায়ে
কিরাম রাঃ এবং রাসূল সাঃ এর মৃত্যুর পর থেকে নিয়ে প্রত্যেক যুগেই কমবেশি সম্মিলিত
ও বিচ্ছ্ন্নিভাবে দাওয়াতের এ দায়িত্ব পালিত হয়ে আসছে ।
হযরত ইলিয়াস রহঃ ব্যাপক আকারে ও সংগঠিতরূপে
সেটির পুনঃজাগরণের চেষ্টা করেছেন মাত্র। প্রত্যেক প্রতিষ্ঠানেরই যেমন কর্মধারা ও
সূচি থাকে,
তিনিও
তেমনি এ জামাতের জন্য কিছু কর্মধারা
তৈরী করেছেন সাধারণ মানুষের জন্য প্রাথমিকভাবে অধিক উপকারী ও জরুরী বিষয় চিন্তা
করে। পূর্ণ শরীয়তকে সামনে রেখে এর মাঝে কোন বিষয়গুলো প্রথমে আমলে আনতে পারলে
পূর্ণ শরীয়তের উপর পাবন্দ হওয়া সহজ হয়ে যাবে তা চিন্তা করে একটি মূলনীতি নির্ধারণ করেছেন। যা কোনভাবেই শরীয়তের
গন্ডির বাহির থেকে নয়। সেই সাথে শরীয় কোন হুকুমকে অস্বিকার করে নয়।
যেমন বর্তমান মাদরাসা শিক্ষা শরীয়তের মাঝে
নতুন কোন সংযোজন নয়, বরং সাহাবায়ে কিরামের মাঝে আসহাবে সুফফার যে
জামাআত সার্বক্ষণিক দ্বীন চর্চায় নিমগ্ন থাকতেন সেটাই ছিল সর্ব প্রথম মাদরাসা।
যদিও বর্তমান মাদরাসা পদ্ধতি আর আসহাবে সুফফার মাদরাসার মাঝে পদ্ধতিগত পার্থক্য
রয়েছে। মৌলিকত্বে
কোন পার্থক্য নেই।
সে সময় কোন সিলেবাস ছিল না। ছিল না কোন
ক্লাসিক্যাল অবকাঠামো। ছিল না সার্টিফিকেট দেওয়ার পদ্ধতি। ছিল না বিধিবদ্ধ শিক্ষক
ষ্টাফের কোন মূলনীতি। কিন্তু পরবর্তীতে আম ফায়দার জন্য এবং দ্বীন চর্চায় অধিক
উপকার অর্জনের নিমিত্তে একটি একাডেমিক পদ্ধতি আবিস্কার করা হয়েছে। যে
আবিস্কার কোন বিদআত নয় মর্মে সকল ওলামায়ে কিরাম একমত। তেমনি তাবলীগ জামাআতের
বর্তমান সাংগঠনিক ভিত্তি হিসেবে কিছু মূলনীতি নির্ধারণও কোন নতুন বিষয় নয়,
বা বিদআত
নয়। কারণ...
মাদরাসা শিক্ষার বর্তমান পদ্ধতিকে যেমন আমরা সওয়াবের কাজ মনে করি না, কিন্তু
ইলমী দ্বীন চর্চাকে জানি সওয়াবের কাজ। তেমনি তাবলীগ জামাআতের পদ্ধতিটা মূলত সওয়াবের
কারণ নয়, বরং এর
দ্বারা যে কাজটি আঞ্জাম দেয়া হয় তথা তাবলীগ সেটি হল সওয়াবের কাজ। এ দু’টিতে কোন
পার্থক্য নেই। সুতরাং তাবলীগ জামাআতকে দ্বীন এর মাঝে নতুন সংযোজন বলে বিদআত
সাব্যস্ত করাটা বিদআতের সংজ্ঞা ও দ্বীন সম্পর্কে চূড়ান্ত পর্যায়ের অজ্ঞতার পরিচায়ক।
কারণ বিদআত বলা হয়
عَنْ عَائِشَةَ رضى
الله عنها قَالَتْ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- « مَنْ أَحْدَثَ
فِى أَمْرِنَا هَذَا مَا لَيْسَ فِيهِ فَهُوَ رَدٌّ
হযরত আয়শা রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ
করেছেন-আমাদের দ্বীনের মাঝে যে ব্যক্তি নতুন বিষয় আবিস্কার করে যা তাতে নেই তাহলে
তা পরিত্যাজ্য। {সুনানে আবু দাউদ, হাদিস
নং-৪৬০৮, সহীহ
বুখারী, হাদিস
নং-২৫৫০, সহীহ
মুসলিম-৪৫৮৯}
এই হাদিসে লক্ষ্য করুন, কি কি শর্তে
নব আবিস্কৃত বস্তুকে পরিত্যাজ্য বলেছেন নবীজী সাঃ।
১- সম্পূর্ণ
নতুন বিষয়। যার কোন সামান্যতম প্রমাণ নবীযুগে বা সাহাবা যুগে নাই এমন বিষয় হতে
হবে।
২- দ্বীনী
বিষয় হতে হবে। সুতরাং দ্বীনী বিষয় ছাড়া যত নতুন বিষয়ই আবিস্কারই হোকনা কেন তা
বিদআত নয়। যেমন বৈজ্ঞানিক আবিস্কার। নতুন নতুন আসবাব ইত্যাদী। এসব বিদআত নয়।
কারণ এসব দ্বীনী বিষয় নয়। বরং বৈষয়িক বিষয়।
৩- দ্বীনের
মাঝে নতুন আবিস্কার হতে হবে। দ্বীনের
জন্য হলে সমস্যা নাই। কারণ দ্বীনের মাঝে নতুন আবিস্কার মানে হল এটা সওয়াবের কাজ।
সুন্নাত, ওয়াজিব
ইত্যাদী। আর দ্বীনের জন্য হলে সেটা মূলত সওয়াবের কাজ নয়, বরং
সওয়াবের কাজের সহায়ক। যেমন মাদরাসা শিক্ষা একাডেমিক পদ্ধতি নববী যুগে ছিলনা।
পরবর্তীতে আবিস্কার করা হয়েছে।
এই একাডেমিক পদ্ধতিটি দ্বীনের মাঝে নতুন
আবিস্কার নয়,
বরং দ্বীনী কাজের জন্য সহায়ক হিসেবে
আবিস্কার হয়েছে। অর্থাত্ দ্বীন শিখার সহায়ক। আর দ্বীন শিখাটা সওয়াবের কাজ।
কিন্তু সিষ্টেমটা মূলত সওয়াবের কাজ নয় বরং সহায়ক। তেমনি তাবলীগের বর্তমান
পদ্ধতিটি ইলিয়াস রহঃ আবিস্কার করেছেন দ্বীন প্রচারের সহায়ক হিসেবে। তথা দ্বীনের
জন্য আবিস্কার। দ্বীন মাঝে আবিস্কার নয়। তাই এটি বিদআত হওয়ার কোন সুযোগই নেই।
যারা বলেন এ পদ্ধতি বিদআত, তারা মূলত
দ্বীন সম্পর্কে চূড়ান্ত অজ্ঞতার পরিচয় দেন এসব কথা বলে।
তাবলীগ জামাআতের কাজ যেহেতু রাসূল সাঃ ও
পরবর্তী সাহাবায়ে কিরামের প্রচার করা দ্বীন প্রচারেরই একটি সুসংহত রূপ মাত্র। তাই
তাবলীগ জামাআতের কাজের সাথে সেসব ফযীলত শামিল হবে যা কুরআন সুন্নাহে বর্ণিত দ্বীন
প্রচারের ফযীলত। যেমন দ্বীন শিক্ষার ফযীলত প্রাপ্ত হবে বর্তমান একাডেমিক পদ্ধতিতে
পড়াশোনা করা মাদরাসা ছাত্ররা।
২/ তাবলীগ জামাআতের ছয় উসুলে পূর্ণ ইসলাম নেই ?
এ অভিযোগটিও একটি অজ্ঞতার পরিচয়বাহী ও
হিংসাত্মক অভিযোগ। যার কোন ভিত্তি নেই। তাবলীগের ছয় উসুলের মাঝে পূর্ণ ইসলাম আছে
একথা কোন তাবলীগী ভাই বলেন নাকি? তারাতো সর্বদা এ কথার
দাওয়াত দেন যে,
ছয় উসূলের উপর চললে পূর্ণ দ্বীনের উপর চলা
সহজ হয়। একথা কোন তাবলীগী ভাই বলেন না যে ছয় উসূলই পূর্ণ দ্বীন। সাথে সাথে
তাবলীগ তথা দ্বীনের দাওয়াত শুধু একথার উপর দেয়া হয় না যে, শুধুমাত্র
ছয় উসূল মানতে হবে, বরং দাওয়াত দেয়া হয় পূর্ণ শরীয়তের পাবন্দ
হতে হবে। তাই নয় কি?
সুতরাং এ দাবি করা যে, যেহেতু ছয়
উসূলে পূর্ণ দ্বীন নেই, তাই তাবলীগী ভাইয়েরা অপূর্ণাঙ্গ দ্বীনের
দিকে আহবান করে। কারণ ছয় উসুলের দাওয়াতের মাধ্যমে পূর্ণ দ্বীনের দিকেই আহবান করা
হয়।
যেমনটি আল্লাহ তায়ালা ছয়টি বিষয়ের অনুসরণ
করলে বান্দা সফলকাম হয়ে যাবে মর্মে সূরায়ে মু’মিনূন এ
ঘোষণা করেন-
قَدْ أَفْلَحَ
الْمُؤْمِنُونَ (1) الَّذِينَ هُمْ فِي صَلاتِهِمْ خَاشِعُونَ (2) وَالَّذِينَ
هُمْ عَنِ اللَّغْوِ مُعْرِضُونَ (3) وَالَّذِينَ هُمْ لِلزَّكَاةِ فَاعِلُونَ (4)
وَالَّذِينَ هُمْ لِفُرُوجِهِمْ حَافِظُونَ (5) الى اخر- وَالَّذِينَ هُمْ
لأَمَانَاتِهِمْ وَعَهْدِهِمْ رَاعُونَ (8) وَالَّذِينَ هُمْ عَلَى صَلَوَاتِهِمْ
يُحَافِظُونَ (9) أُوْلَئِكَ هُمُ الْوَارِثُونَ (10) الَّذِينَ يَرِثُونَ الْفِرْدَوْسَ
هُمْ فِيهَا خَالِدُونَ (11)
১- নিশ্চয় সফলতা অর্জন করেছে মুমিনগণ। ২-যারা
তাদের নামাযে আন্তরিকভাবে বিনীত। ৩-যারা অহেতুক বিষয় থেকে বিরত থাকে। ৪-যারা
যাকাত সম্পাদনকারী। ৫-যারা নিজ লজ্জাস্থান সংরক্ষণ করে। ৮-এবং যারা তাদের আমানত ও
প্রতিশ্রুতি রক্ষা করে। ৯-এবং যারা নিজেদের নামাযের পরিপূর্ণ রক্ষাবেক্ষণ করে। ১০
এরাই হল সেই ওয়ারিশ। ১১-যারা জান্নাতুল ফিরদাউসের উত্তারাধিকার লাভ করবে। তারা
তাতে সর্বদা থাকবে। {সূরা মুমিনুন-১-১১}
এ আয়াত সমূহে লক্ষ করুন-ছয়টি কাজ করলে
আল্লাহ তায়ালা সফলকাম হওয়ার নিশ্চয়তা দিয়েছেন। সেই সাথে জান্নাতী হওয়ার
ঘোষণাও দিয়েছেন। অথচ এ ছয়
কাজে রোযার কথা নেই। নেই হজ্বের কথাও। তাহলে কি
আল্লাহর বলা সফলকাম হওয়ার জন্য রোযা রাখার প্রয়োজন নেই? নেই হজ্ব
ফরজ হলে হজ্ব আদায়েরও।
এ দু’টি গুরত্বপূর্ণ ফরজ ছাড়াই কি ব্যক্তি
জান্নাতী হয়ে যেতে পারে? কিভাবে?
এর জবাব যেমন-এ ছয়টির মাঝেই পূর্ণ দ্বীন
শামিল। তেমনি তাবলীগের ছয় উসূলের দাওয়াতের দ্বারাও পূর্ণ দ্বীনের উপর আমলের
দিকেই আহবান করা হয়। যা কিছুতেই দ্বীনকে সীমাবদ্ধ করা নয়, যেমন
আল্লাহ তায়ালা সীমাবদ্ধ করেন নি।
আল্লাহ তায়ালা আমাদের সহীহ বুঝ দান করুন। লুতফুর রহমান ফরায়ে ।
এরপর পড়ুন তাবলীগের মুরুব্বি আশরাফ আলী (র.) যুক্তি…. এখানেও ক্লিক করলে পোস্টা পড়তে পাড়বেন আবার উপরে টেববারে ক্লিক করেও পড়তে পারেন।
No comments:
Post a Comment